ভিন স্বাদের স্বাধীনতা

মুক্তির চেতনা (মার্চ ২০১২)

মনির খলজি
  • ২৪
  • ৩৪

"বাঙাল কা কাঙাল, সুয়োরকা আওলাদ, কিসকো লিয়ে তু ইয়ে জমিনপর আয়া ? ছালা, বোল ...বোল....পাকিস্তানকো লুটনেকে লিয়ে অওর উরানাকে লিয়ে?" দুই পাকিস্তানী কনস্টেবল এসব বলতে বলতে এইযে লাঠিপেটা শুরু করে ...নাকে মুখে গোটা শরীরে কিল-ঘুষি মেরে, লাথি দিতে দিতে ১২ বছরের খোকনকে মাটিতে লুটিয়ে দিল । স্থান পাকিস্তানের করাচি শহরের গুলশান থানা ।

গুলশান-এ-ইকবাল করাচির একটা পশ জায়গা যেখানে পাকিস্তানের সব জাদরেল পরিবারদের সুন্দর সুন্দর অট্টালিকায় বসবাস ! সেখানের কায়দে-আজম লেনে একটি ধনবান বাড়িতে খোকন রাঁন্না-বান্না বাদে বাসার প্রায় সবকাজই করে ।
.........................................................................................................................................................................

ঢাকার বড় মগবাজারের নিকট একটি বস্তিতে দুই বাচ্চা সাইদ (১১ বছর) আর লাকি (৮ বছর) দের নিয়ে আসমা বিবির বসবাস । বাপ হারা দুই সন্তানের খাবারের সংস্থান করতে আসমাকে ২/৩ বাসায় কাজ করতে হয় । আরেকদিকে অকালে বাপ হারায় সাইদও এক গোয়ালার তরফ হতে বাসায় বাসায় প্রতিদিন দুধ সরবরাহ আর মাসিক টাকাটাও সংগ্রহ করে, বিনিময় গোয়ালা সামান্য যা বেতন দেয় তা মায়ের কামাইয়ের সাথে যোগ করেই কোনো রকমে অভাবের সংসার চলে যায় । ঐ বছর ১৯৭০ সালের প্রথম দিকে গণমুক্তির আন্দোলনের সময় তথকালীন পাকিস্তানী সরকার বাহিনীর গুলিতে বাপ কালাম মিয়া রিক্সা-চালক ঢাকার রাজপথে প্রাণ হারায় । ফলে, সাইদ-লাকির পড়াশুনা বন্ধ তো হয়েই যায় উপরন্ত সেই উত্তাল দিনগুলোর মধ্যে মা ও ছেলের কামাইটাও দুরহ হয়ে উঠছিল ।

ইস্কাটন রোডের এক বাড়ির কর্তী মহিলা সায়েরা খান সাইদকে খুবই স্নেহ-আদর করেন, যখন সে ঐ বাড়িতে দুধ দিতে যেতো প্রায়শই নাস্তা-পানি সহ হাসি-মুখে বিদায় দিতেন তাকে এবং তার মা আসমা বিবিরও তা জানা ছিল । সে বাড়ির গৃহকর্তা সায়ীদ আজমত খান ব্যবসায়ের কাজে বেশীরভাগ সময়েই দেশের বাহিরে ব্যস্ততায় কাটান । গৃহকর্তা হঠাৎ করেই একবার দেশে ফিরেই তার স্ত্রী সায়েরাকে বললেন আমাদেরকে এখান থেকে সরে যেতে হবে । এদেশের দিনকাল একদম ভালো নয় কখন কি হয় বলা মুশকিল, যখন তখন গৃহ যুদ্ধ বেঁধে যেতে পারে । কিন্তু সায়েরা খান দেশ ছেড়ে যেতে কিছুতেই রাজি নন । কিভাবে আমি মাতৃভূমি ছেড়ে যাই ? তার মন কোনভাবেই সায় দিলনা । কর্তা বাক্তি অনেক ভুলায়-ভালে তাকে বুঝানোর চেষ্টা করলেন ।

অবশেষে এখানের ব্যবসায় ও জানমালের ক্ষতির ভয়ে সায়েরা খানেরা দেশ ত্যাগের চিন্তা চূড়ান্ত করলেন । কিন্তু, সাইদের প্রতি তার যে স্নেহ-মমতা তাতে চির ধরাতে রাজি নন । তাই অকপটেই সাইদকে তাদের সাথে যাবার জন্য পিরাপিড়ি করতে লাগলেন আর অনেক কিছু আশার বাণী ও উজ্জল ভবিষ্যতের পাক্কা কথা দিলেন । সাইদও মনস্তাত্ত্বিক ভাবে দুর্বল হয়ে পড়েছে । এমনিতেই সায়েরা খানের প্রতি তারও যেন অনেকটা শ্রদ্ধা সহানুভুতি মনে গেঁথে বসেছে । অন্যদিকে সায়েরা খানের একমাত্র ছেলে আরেক দেশে পড়াশুনা করছে ইন্টার ফাইনাল পরীক্ষার শেষ পর্যায়ে । নাম সায়ীদ জাবের খান । জাবের বলেই ডাকে । তার ছেলের ছায়া-চিহ্ন সাইদের মুখে দেখতে পান বলেই তার প্রতি এত মায়া ।
দোটানায় সাইদকে এ কাঁচা বয়সেই মানসিক চাপে ফেলে দিয়েছে একদিকে মা আর বোন ..অন্যদিকে ম্যাডাম আর উজ্জল ভবিষ্যত । তার মাকে খোলাখুলি কথাগুলো বলে । আসমা বিবি বাকরুদ্ধ , এছেলে কি বলে ? "তর মাথাটারে খাইলো কেডা ? হেই বয়সে তুই বাইরে যাবি কিল্লা ? মাথায় কি পোকা ঢুকছে, এক্কেবারে মাইরা ফেলামু । "মায়ের এরকম রুদ্র মূর্তি সে কখনো দেখেনি । ও যেন বেকুবের মত কিছুক্ষণ মায়ের দিকে তাকিয়ে থাকে তারপর সান্তনা দেয় "আচ্ছা অইছে জাইত্তাম না" চোখ বেয়ে গরগর করে পানি ঝরছে আসমা বিবির, সাথে ছোট বোনটাও কাঁদছে আর বলছে "তর সাথে আর কথা কমু না ।" সাইদ বলে, "পাগলিটা অইলোতো যামু না ।" ধীরে ধীরে মা বোন শান্ত হয় । পরদিন ম্যাডামকে জানায় সে যাবেনা, মা-বোন দুজনই বাধ সেজেছে । সায়েরা ম্যাডাম শুধু বলে তুমি রাজি আছ কিনা বাকিটা আমি দেখব । সাইদকে যেন আবার বেকায়দায় ফেললো ...বলল মন চায় না মা বোনদেরকে ছেড়ে কোথাও যেতে কিন্তু যখন সংসারের অভাবের কথা ভাবি লাকি বোনটার ভবিষ্যতর কথা ভাবি তখনই মনটা খারাপ হয়, আপনাদের সাথে যাবার চিন্তা করি । আচ্ছা চলো আমি তোমাদের বাসায় যাব - ম্যাডাম সাইদকে বলে ।সায়েরা ম্যাডাম সাইদের বাসায় গিয়ে অনেক ধরনের বশীকরণের ফর্মুলা খাটিয়ে অবশেষে ৭০০০ হাজার টাকা আসমা বিবির হাতে গুজিয়ে দিয়ে বলেন টাকাটাকে ছেলের অনুপস্থিতে কাজে লাগানোর । আরো আশ্বাস দিলেন মাঝে-মধ্যে আরো পাঠিয়ে দিবেন । অভাবের সংসার আর লাকির ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে আসমা বিবি সাইদকে রুখতে পারলেন না ।
.........................................................................................................................................................................
সায়েরা খান প্লেনে চেপে বসলেন সাথে কর্তা আর সাইদও পাশের দু'সিটে বসলেন । দেশ ত্যাগ আর আত্মীয়-স্বজনের মাঁয়াজাল ছিড়ে চলে যেতে হচ্ছে এক ভিন্ন জায়গায় বুকফাঁটা বেদনার কাঁন্না শুধুই অশ্রুজল হয়ে ঝরছে । ঠিক সাইদেরও একই অবস্থা । প্রায় ৪ ঘন্টা পর প্লেন করাচি এয়ারপোর্ট অবতরণ করলো । এয়ারপোর্টে জাবের তার বাবা-মাকে কাছে পেয়ে খুশিতে যেন ফেটে পড়ল । সাইদের চোখে ভেসে এলো একদিকে তার মায়ের কাছ থেকে বিচ্ছেদের প্রতিচ্ছবি অপরদিকে আরেক মা- ছেলের মিলনের দৃশ্য । বুকটার ভিতরে যেন হাহাকার করে উঠলো সাথে একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়ল ।
"আম্মিজান ইয়ে লাড়কা ?" কথা শেষ না হতেই সায়েরা খান বলেন " বেটা ইয়ে সাইদ হেয়......সমঝ-লে ইয়ে তেরা ছোটা ভাই হো .. হামারি সাথ রাহেগী ।" ....."ওকে নো প্রবলেম, আচ্ছি বাত হেয়", জাবের বলল । তারপর সকলে একটি কারে চেপে করাচির বাড়িতে পৌঁছলো ।

তখন সন্ধা হয়ে আসছে । বাড়ি তো নয় যেন প্রাসাদসম । বিশাল আকারের বাড়ি যেখানে আজমত খাঁন সাহেবরা মা সহকারে তার আরো দুভাইয়ের সংসার মিলিয়ে আছেন । সাইদ হা করে তাকিয়ে বাড়ির এদিক ওদিক দেখতে থাকে । ভিতর থেকে জাবেরের দাদিমা এসে কুশল বিনিময় করে সকলকে নিয়ে ঘরে ঢুকলো । আজমত সাহেবের বড় ভাই ও তার অনুজ দুজনই তাদের স্ত্রীসহ উপর থেকে ড্রইং রুমে নেমে এলেন আর ওদের খবরা-খবর নিয়ে জানতে চাইলেন পূর্ব পাকিস্তানের কথা । আজমত সাহেব বলেন, ''ভেরি টেন্স সিচুয়েশন ...এনিথিং কেন হাপেন এনিটাইম ।" তখন তার বড় ভাই বলেন খুব ভালো হয়েছে তোমরা এখানে ফিরে এসেছো । "ছালা ইয়ে বাঙাল ছব আচ্ছা গাদ্দার হেয়....উস্ক মালুম নেহি জো সামনে হোৱা হায়....জিতনী দিন জায়েগা উতনী মুস্কিল হোগা" এসব বলার পর তার ছোট আজমত সাহেবকে বুঝাতে লাগলেন - পূর্ব পাকিস্তান থেকে তো ভালো ব্যবসা অনেক আগেই কামিয়েছো অনেকদূরও এগিয়েছো । এখন আপাতত ওখানকার চিন্তা বাদ দিয়ে এখানকার আমাদের ব্যবসায় ঢুকে পরো । আজমত সাহেব তার কথার সহমত প্রকাশ করলেন । এদিকে সায়েরা ম্যাডামের মনে বেদনার উদয় হলো আবারও । আর কি তাহলে দেশে ফিরে যেতে পারব না ?বাবা-মা, ভাই-বোনদের সাথে কি আর দেখা হবে না ? চিন্তা করতে লাগলেন । শাশুড়ি মা তার মলিন চেহারা দেখে বলেন , ''বেটিয়া ডরাও মাত, আল্লাহ চাইয়েতো ছওব ঠিক হো জায়গী ।" এখন সকলে সাইদের দিকে তাকিয়ে আছে আর বড় ভাই আজমত সাহেবের দিকে তাকিয়ে সাইদের কথা বললেন "এ লাড়কাকো পে্হচেনা নেহি" আজমত উত্তর দিলেন, "ভাইজান ইয়ে বাঙাল লাড়কা, সায়েরা ইসিকো কাম করনেকো লিয়ে লে আয়া, হামারি সাত রহেগী ।"
.........................................................................................................................................................................
তার নাম সাইদ জেনে একটু ক্ষুব্ধ হয়ে বড় ভাই বললেন ''ইয়ে নাম নেই চালেগি, পরম্পরা ইয়ে হামারা টাইটেল হায়, আওর সায়ীদ কই মামুলি বাত নেহি হেয়, ইয়ে ছোটা কাঙাল বাঙাল কো সাথ হামারা নামকো বেঈজ্জোতি হোগা, কই আলাগ নাম ঢূনরো ।" সাইদ তো তাদের কথার তেমন মানে না জানলেও বুঝতে পারছে তার নাম নিয়ে একটা কিছু চলছে । সায়েরা ম্যাডামের মন কিছুটা খারাপ হয়ে গেল । তখন দাদীমা তার বৌমাকে বললেন অন্য কোনো নাম দেয়া যায় কিনা । ম্যাডাম তখন সাইদকে জিজ্ঞেস করলো বাবা তোর কি অন্য কোনো নাম আছে ? ও বলল হা আমাকে মা আদর করে ডাকে খোকন । ঠিক আছে এখন থেকে সকলে তোকে ওই নামেই ডাকবে । ও বলল ঠিক আছে ম্যাডাম ।
..........................................................................................................................................................................
আজমত সাহেবরা তার বাবার গড়া ব্যবসা প্রায় ১৫/১৬ বছর ধরে পূর্ব পাকিস্তান থেকে অনেক কম দামে পাট ও চামড়া জাতীয় দ্রব্য, চাপাতা অতি স্বল্প মূল্যে এখান থেকে কিনে কয়েকগুন উচ্চ মূল্যে মিডিল-ইস্ট, ইউরোপ দেশগুলোতে রফতানি করত, আবার এসব দ্রব্য নিয়ে যেয়ে পশ্চিম পাকিস্তানেও কিছু লাভে বিক্রি, আর পশ্চিম পাকিস্তান থেকে স্টিল দ্রব্য আর মসল্লা, শুষ্ক ফল (পেস্তা, বাদাম), কাপড় এখানে পূর্ব পাকিস্তান এনে অনেক চড়া মূল্যে বিক্রি করত । ত্রিমুখী ব্যবসায় লাভ করে অর্জিত সব অর্থ পশ্চিম পাকিস্তানে জমিয়ে প্রচুর ধনসম্পদের অধিকারী হয়েছেন তারা এতদিনে । সেখানে তাদের গ্রুপ অব ইন্ডাস্ত্রীজ রয়েছে বিভিন্ন নামে । এভাবে উর্দুভাষী তৎকালীন পশ্চিম পাকিস্তানী অনেক ব্যবসায়ী পূর্ব পাকিস্তানকে চুষেছে । এছাড়াও সরকারী ভাবে এখানকার উৎপাদিত চিনি, কাগজ, চাল, ডাল নিত্য প্রয়োজনীয় অনেক পণ্য পশ্চিমে নিয়ে যেয়ে এখানকার থেকে অনেক কম মূল্যে সেখানকার নাগরিকদের হাতে তুলে দিয়েছে । এভাবে ব্রিটিশ শাসনের পর আমরা বাঙ্গালীরা আবারও চরম শোষনের জিঞ্জিরে আটকা পরেছিলাম । শুধু তাই নয়, এদেশের মানুষের ন্যুনতম অধিকার গুলো দিনে দিনে ছিনিয়ে নিয়ে বাঙালীদের একের পর এক পরাধীনতার শৃঙ্খলে বেঁধে রেখে দিয়েছিল । ব্যবসা, অফিস -আদালত, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, প্রতিরক্ষা সবকিছুতেই তাদের নিরুঙ্কুশ আধিপত্য ছিল । এগুলোর উচ্চ পর্যায়ের পদ কিংবা প্রতিনিধিত্ব আমাদের বাঙালীর দ্বার ছিল বন্ধ । এসকল শোষণ-পীড়নের ক্ষোভের বহি:প্রকাশ ৫২এর ভাষা-আন্দোলন আর ৬৯-এর ভোটাধিকারের মাধ্যমে বাঙালী নেতৃত্বের প্রতি অবাধ ও নিরুঙ্কুশ সমর্থন দান । তারপরও নর-পিশাচেরা বল প্রয়োগের মাধ্যমে বাঙালির অধিকার হননের চেষ্টা চালায় । পরবর্তিতে পুরো ১৯৭০ জুড়ে চলে সামরিক শাসন জারি এবং তার বিরুদ্ধে গণআন্দোলন চলতে থাকে, হয় গণঅভ্যুত্থান । প্রতিবাদী জনগনের সোচ্চারে, মিছিলে মিছিলে ভরে যায় পূর্ব পাকিস্তানের রাজপথ অলি-গলি । এমনি একদিন রংপুর শহরে জনগনের মিছিলের উপর ৭১ এর ৩ রা মার্চে উর্দুভাষী পাকিস্তানীরা গুলি চালালে একজনের মৃত্যু হয় । এতে আরো ফুলে-ফেঁপে উঠে বাঙালীর অদম্য মুক্তির আন্দোলন । ৭১এর ২৫ মার্চের কালো গভীর রাত্রিতে নিরীহ, ঘুমন্ত, অস্ত্রহীন বাঙ্গালীদের উপর হায়নাদের হিংস্র থাবায় পুরো দেশ যেন আগুনের লেলিহান শিখায় পরিনত হয় । পরদিন বাঙালীর অবিংসবাদী নেতার স্বাধীনতা ঘোষণার মাধ্যমে বাঙ্গালীরাও শত্রু নিধনে যা কিছু সম্বল তা নিয়েই ঝাপিয়ে পরে । শুরু হয় রক্তপাত যুদ্ধ । স্বাধীনতা ও মুক্তির যুদ্ধ । রক্ত আর রক্ত, বাংলা মায়ের শরীর বেয়ে শুধুই রক্ত ঝরতে লাগলো । পাক-পশুরদল বাঙালী শিশু-নারী, বুড়ো-জুয়ান নির্বিচারে হত্যাযজ্ঞ চালিয়ে যেতে লাগলো । তখনকার বন্ধু-প্রতিম পার্শবর্তী দেশ ভারত বাঙালী জনগণ ও মুক্তিসেনাদের প্রতি সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিল ।

যখন বাঙ্গালীদের তীব্র জবাব ও প্রতিঘাত সহ্য করতে পারছিল না, তখন পশ্চিম পাকিস্তান থেকে বিপুল পরিমান পাক-বাহিনী, আর অস্ত্র-শস্ত্র এনে ভান্ডার গড়ে তুলতে লাগলো, এমনকি পশ্চিম পাকিস্তান থেকে সাধারণ জনগণ এনে এখানে চুরি-ডাকাতি-রাহাজানির মাধ্যমে উর্দুভাষী পাকিস্তানি বসতিও বৃদ্ধি করতে লাগলো । সাধারণ বাঙ্গালীরা জান-মালের ভয়ে তাদের বাড়িঘর ছেড়ে দুরে এবং পার্শবর্তী দেশে উদ্বাস্তু হয়ে সরে যেতে লাগলো । পাক বাহিনীর ভারী-অস্ত্র-সস্ত্রে যুদ্ধ করতে লাগলেও আমাদের বাঙালী মুক্তি সেনারা মনস্তাত্ত্বিক ও বুদ্ধিভিত্তিক দিক দিয়ে তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ তীব্র ও বেগবান করে তুলল । যুদ্ধ দীর্ঘ-স্থায়ী হয়ে মাসের-পর মাস চলতে লাগলো । ঠিক যে হারে বাঙালীদের নিধন শুরু করেছিল, মুক্তিসেনারাও দাঁত ভাঙ্গা জবাবের মাধ্যমে শত্রু নিধনে এগিয়ে যেতে লাগলে ক্রমেই পাক-হানাদাররা কোনঠাসা হয়ে পড়তে লাগলো ! মুক্তিসেনাদের একের-পর এক জয়ের রথ তাদেরকে চতুর্দিক থেকে ঘিরে ফেলে তাদের পরাজয়বরণ করতে বাধ্য করলো । ৯ মাস পর যুদ্ধ থামল । অভ্যুদয় হলো এ পৃথিবীর বুকে একটি সাহসী মানচিত্র যার নাম বাংলাদেশ ।

............................................................................................................................................................................
যুদ্ধের আগে থেকেই সাধারণ পশ্চিম-পাকিস্তানিরাও পূর্ব পাকিস্তানে বাঙালী নেতৃত্ব মেনে নিতে পারছিল না । তাদের বেশীর ভাগই দাসত্বের শিকলে বাঙ্গালীদের বেঁধে রাখতে চেয়েছিল চিরকাল । যুদ্ধের আপদকালীন সময়ে পশ্চিম পাকিস্তানী যুবকদের ৭১ এর যুদ্ধে অংশগ্রহনের জন্য সামরিক আহবান জানানো হয় । সায়েরা খানের ছেলে ততদিনে ইন্টার পাশ করে অস্থির পাকিস্তানে পরবর্তী পড়াশুনার জন্য মন স্থির করলেও সরকারের আহবানে সে পাকিস্তানী সেনা বাহিনীতে অফিসার পদে যোগ দেয় যদিও তাতে সায়েরা খানের দ্বিমত ছিল । সায়েরা ম্যাডামের ভাসুরের একছেলে আগে থেকেই সেনা বাহিনীতে কেপ্টেন পদে ছিল । তার ডাকেই জাবের সারা দেয় বেশি । অন্যদিকে আজমত সাহেবের উপর তার ভাইয়েরাও আগে থেকে নাখোশ বাঙালী মেয়ে সায়েরাকে বিয়ে করার জন্য । সায়েরা খুব সুন্দরী বাঙালী ঢাকার মেয়ে । তার বাবা তৎকালীন হাবিব ব্যাংকে চাকুরী করতেন । ব্যবসায়িক কাজেই ঐ ব্যাংকে আজমত সাহেবের যাতায়াত ছিল । একদিন ঢাকা ইউনিভার্র্সিটি পড়ুয়া সুন্দরী মেয়ে সায়েরা বাবার অফিসে একটা কাজে গেলে সেখানে তার সাথে পরিচয় হয় এবং পরে আজমত সাহেব তার বাবাকে প্রস্তাব দেয় । এরপর দুজনের বিয়ে হয় । যুদ্ধের আগে থেকেই দিনরাত আজমতকে এনিয়ে খোঁটা শুনতে হয় ভাই-বোনদের কাছ থেকে । যুদ্ধ বাঁধার পর খোঁটার মাত্রা বেড়ে যায় । একমাত্র শ্বাশুড়িই শুধু সায়রাকে তার সুন্দর মনের জন্য ভালবাসেন । খোঁটা শুনতে শুনতে আজমত খান যেন দিন দিন সায়েরার অপরিচিত হয়ে উঠলো । আজমত নিজেই এখন সায়েরাকে খোঁটা মারে .বাঙাল মেয়ে বলে । সায়েরা লিখা-পড়া জানা মেয়ে সে মাঝে-মাঝে সহ্য করতে না পেরে পাল্টা কথার আক্রমন চালাতো । তার স্বামী বলে ‘’গন্ধ নালীর মেয়ে ...। ফকিরের মেয়ে আমি উঠিয়ে নিয়ে এসেছি বলেই তোর এত দেমাগ । তোমরাতো পাকিস্তানের জঞ্জাল ।" সায়েরা যেন আর কুলোতে পারছেনা । এমনিতে দেশের থেকে তার বাবা মা, ভাই-বোন আত্মীয় স্বজনদের খবর আশা বন্ধ হয়েছে । দেশে যুদ্ধ চলছে .....শহর ছেড়ে তার বাবা-মা-রা সকলে কোথায় চলে গেছে তার কোনো সংবাদ নেই । এদিকে ছেলেও বাঙ্গালীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে বাংলাদেশে অবস্থান করছে । সব মিলিয়ে যেন সে দিশেহারা । অন্যদিকে খোকনও খুবই মর্মাহত । সারাদিন শুধু বাড়ির কাজ আর কাজ, দু’একজন যে কাজের মহিলা আছেন তারাও আজকাল খোকনের দ্বারা খাটিয়ে নেয় । যুদ্ধের আগে দু-একবার মা-বোনের সাথে কথা হলেও আর যোগাযোগ হচ্ছে না । কথা অনুযায়ী তার বাড়িতে আর টাকাও পাঠাতে পারছেনা সায়েরা ম্যাডাম । বাঙালী বৌমা আর শ্বাশুড়ির কর্তীত্ব দিন দিন কমিয়ে এসেছে করাচির বাড়িটিতে । শ্বাশুড়ি এখন পক্ষাঘাত গ্রস্থ । তিনি শুধু সায়েরা আর খোকনকে সান্তনায় দিতে পারেন তাও আবার আড়ালে ।
..........................................................................................................................................................................
বেশ কদিন ধরেই ২/১ দিন বাদেই আজমত সাহেব তার ছেলে ও ভাতিজার খবরা-খবর সরকারীভাবে করাচির আর্মি হেড কোর্য়াটার থেকে নিয়ে আসছিলেন । তারা সেনা দুই ভাই অনেক বাঙালী যুবকদের বাড়ি থেকে নিয়ে এনে এনে মেরেছে । তাদের ভিন্ন ভিন্ন নেতৃত্বে বেশ কটা আক্রমনে বহু মুক্তি সেনাদের খতম করেছেন ইত্যাদি ইত্যাদি । এগুলো শুনে শুনে তাদের ভাই-বোনদের যেন বুক ফুলিয়ে গেল অনেকটাই । " শেষ করদো শালা ছব বাঙালকো .....হামারাকো পছন্দ নেহি ...ইন্ডিয়াকো বাপ সমস্তে" আরো নানান গালী দিতো । সায়েরা আর খোকনকে দেখলেই গালীর মাত্রা বেড়ে যেতো । খোকন অনেক উর্দু শিখে গেছে এরই মধ্যে । আর ম্যাডাম তো ঢাকায় থাকতে তার স্বামীর আর শ্বশুর বাড়ির কারণে শিখে গেছে । দুজনই যেন ভাবছে এই উর্দু না শিখলে অন্তত দেশকে নিয়ে এসব বাজে কথা মনে আঘাত দিতো না । তারা শুধু নিরব কাঁন্না কেঁদে যায় ।।
যুদ্ধের এক সকালে, সায়েরাকে ছাড়াই আজমত সাহেব যখন তার ভাই-ভাবিদের নিয়ে নাস্তার টেবিলে তখন একটা টেলিফোন এলো, আর্মি হেড কোয়ার্টার থেকে খবর এলো যে জাবের মুক্তিসেনাদের হাতে নিহত হয়েছে তার পুরো ব্যাটেলীয়ন সহ । আজমত সাহেব ফোনে ফেলে দিয়ে চিৎকার দিয়ে মেঝেতে বসে পরলেন, "ছব সেস্ হোগেয়া ছব ছব ...ইয়ে খোদা তোম কেয়া কার দিয়া ...হামারা মাসুম বাচ্চাকো ছিন লিয়া .. হামরা দিন কেয়ছে...কেয়ছে গুজার জায়গে ?" তখন সকলেই বুঝতে পারল জাবের আর নেই ! সকলে মিলে এইযে কাঁন্নার মাতম তুলল মনে হলো যেন আকাশ ভেঙ্গে পরছে ! কাঁন্নার শব্দ পেয়ে আরেক ঘর থেকে সায়েরা নেমে আসতেই তার উপর যেন আর সব চড়াও হলো । উর্দুতে বলতে লাগলো হারামজাদী তোর কারণে আজ আমাদের এই দুঃখ । তোরাই আমাদের বাচ্চাকে মেরেছিস । বলেই সায়েরাকে চর-থাপ্পর মারা শুরু করলো । সায়েরার বুঝতে দেরী হলনা তার চোখের মনি ছেলে জাবের আর বেঁচে নেই । নিজে কি আর আর্তনাদ করবে উল্টো মারধর চুল-কাপড় ধরে টানাটানি, অকথ্য গালিগালাজ সামলাতেই নাস্তা-নাবুদ । এতক্ষণ সব সহ্য করে কেঁদে যাচ্ছিল আর বলল 'আল্লাহ তুমি এ-অত্যাচারের বিচার কর ।' বলতে না বলতেই হটাৎ করে আজমত সাহেব উঠে এসে তাকে টেনে হেঁচড়ে কিল ঘুষি, লাথি মারতে মারতে বলতে "লাগলো সালা সুয়োরকা বাচ্চা হামারা লাড়কাকো খাগেয়া ফিরভি হামারা সাজা মাংরাহা হো আল্লাহকি পাস ?" এসব বলতে বলতে পেটে, বুকে, মাথায় লাথি মারতে থাকলে দুরে দাড়ানো খোকন আর সহ্য করতে পারছিল না । দৌড় দিয়ে এসে আজমত সাহেবের পা জড়িয়ে বলতে লাগলো মালিক ম্যাডামকে ছেড়ে দিন, উনার কোনো তো দোষ নেই । তখন আজমত এবার খোকনকে ধরে একটা লাঠি হাতে নিয়ে এই যে পিটানো শুরু করলো তোরা বাঙাল এক হয়েছিস ? তোদের মধ্যে এত দরদ ..ইত্যাদি বলে চরমভাবে পিটাতে লাগলো । সায়েরা মাটি থেকে কোনো রকমে উঠে আজমত সাহেবকে বলে ...তোমার হাত -পায়ে ধরছি ওকে মেরো না ও নিরীহ মাসুম ছেলে । ওকে ছেড়ে দাও, প্লিজ ওকে ছেড়ে দাও । আজমত সাহেব খোকনের সাথে জড়িয়ে সায়েরাকে অনেক গালি দিতে দিতে অবশেষে খোকনকে ছেড়ে দিল আর বলল এখনি বাড়ি থেকে বের হয়ে যা কুত্তার বাচ্চা আর যদি এখানে দেখি তোকে মেরেই ফেলবো । সায়েরা খোকনকে বলল বাবা তুই এ বাসা থেকে অন্য কোথাও যা নাহলে তোকে মেরে ফেলবে । তুই যা, যা..।

খোকন বলতে থাকে ম্যাডাম আপনাকে ছেড়ে আমি যাবনা কোথাও, মরি বাঁচি এখানেই থাকব । আজমত সাহেব বলেন কি যাবি না দাঁড়াও চল আমার সাথে বলে টেনে হেঁচড়ে তাকে গাড়িতে তুলে নিয়ে সোজা তাদের এলাকার গুলশান থানায় নিয়ে যেয়ে বলেন এ বাঙাল ছোকরা আমার বাসায় থাকতো এখন সে আমার বাড়ির আজ এটা নেই, কাল ওটা নেই, এভাবে আজকে সে আমার গিন্নীর ১০ ভরি গয়না চুরি করেছে । খোকন প্রতিবাদ করে বলে সব মিথ্যা স্যার । আজমত সাহেব বলেন আমার কথা আপনারা বিশ্বাস করেন না ? থানার কর্মকর্তা কে তার ছেলের মৃত্যু সংবাদও শুনান । ওই পুলিশ কর্মকর্তা খোকনকে উদ্দেশ্য করে বলে, " ছালা, খাঁ সাহাব ঝুট ওর তু সাচ বল রাহা হেয় ? সারা বাঙাল হারামখোর ।" আজমত সাহেব মিথ্যা এজাহার দিয়ে চলে গেলেন । তারপর তো যা ঘটল তা শুরুতেই বলা হয়েছে !

খোকন কিছু বলতে গেলেই শুনতে চায়না পুলিশ, কারণ সে বাঙাল । নাক মুখ দিয়ে রক্ত ঝরছে । এক পর্যায়ে বেহুশ হয়ে পরে সে । যখন জ্ঞান ফিরে তখন এক কনেস্টেবল বলে "সাচ কাহিনী হামকো বাতা" খোকন সবকিছু খুলে বলে । তারপরে সে পুলিশটা বলে আচ্ছা তোকে ছেড়ে দেয়া হবে কিন্তু আমার একটা শর্ত--, তুই তোর দেশে চলে যাবি, সেখানে আমার এক ভাই চিটাগাং-এ পোর্টে কাস্টম অফিসে চাকুরী করে, তার নাম দিচ্ছি আমাকে তার খোঁজটা দিয়ে জানাবি, ঠিক আছে ? খোকন বলে স্যার হাঁ আমি যদি যাই অবশ্যই জানাবো । পুলিশটা বলে যদি না কনফার্ম বল তা নাহলে তোকে খুঁজে আবার ধরে নিয়ে আসব । আর যদি ঠিক ঠিক কাজটা করিস তাহলে আমি তোকে নিজেই যেখানে চাস সেখানে এখন ছেড়ে দিয়ে আসব । ও তখন বলে ঠিক আছে সার । তারপরে, সুবিধা মত এক সময়ে কনেস্টেবলটা তাকে নিয়ে করাচির এক বাজারে খোকনকে নামিয়ে দিয়ে আসল ।

বাজারে এক দোকানর বাঙালী ছেলের সাথে পরিচয় ছিল তখন সে সেখানে গেল, যেয়ে সব কথা খুলে বলল । খোকন বলল সায়েরা ম্যাডামকেও ওরা মেরে ফেলবে একটা কিছু করেন আলী ভাই । আলী ঐ দোকানের কর্মচারী । মালিক তাকেও বাংলাদেশ থেকে এনেছেন । প্রায় বাজার করতে এসে খোকনের সাথে আগেই পরিচয় হয় । আলী একটু ভেবেই বলল জানিস আমার মালিকটা যদি ভালো না হত আমাকেও এতদিনে মরে যেতে হত । যাক, আগে বল তোর ম্যাডামের বাড়ির কোনো ফোন নম্বর জানা আছে কিনা, প্রথমে ম্যাডামের সাথে যোগাযোগ করা দরকার । হাঁ আছে খোকনের জবাব... দুটা নম্বর জানি একটা ওদের ড্রইং রুমের আরেকটা ম্যাডামের মানে সাহেবের বেড রুমের । তবে এখন ফোন করলে হয়ত ম্যাডাম নাও ধরতে পারে । সকলেই বাড়িতে আছে । আচ্ছা একটু পরে করব ।

ওদিকে ঘটনার পর আজমত রেগে সায়েরাকে উপরে যেতে বলেন । আজমত সাহেব ভাইবোনদের নিয়ে করাচী আর্মি হেড কোয়ার্টারে গেলেন । ছেলের মৃত্যুর বিস্তারিত জানার জন্য । আহত সায়েরা খান বেডরুমে বসে মাথায় হাত দিয়ে স্থির চোখে তার ছেলের স্মৃতি গুলো ভাবছিলেন আর অঝোরে বোবা কাঁন্না করছিলেন । সময় তখন দুপুর আড়াইটা । এমন সময় বেড রুমের ফোন বেজে উঠলো ।এ সময়ে খোকন ও আলীর সাথে ফোনে আলাপ হলো । ম্যাডাম বললেন করাচীর সদ্দর রোডে হাবিব ব্যাংকের ব্রাঞ্চে তার বাবার পরিচিত এক বাঙ্গালী অফিসার আছেন তার সাথে যেন তারা যোগাযোগ করে বিস্তারিত জানাতে বলে । আর আলীর দোকানের ফোন নম্বরটা চাইলেন । অবশেষে খোকন ও আলী বাঙ্গালী ব্যাংক কর্মকর্তা শফিকুর রহমান সাহেবের সাথে দেখা করলো । শফিক সাহেবও ব্যাংকের বসদের আস্থাভাজন হিসেবে নিরাপদে আছেন । শফিক সাহেব তাদের কাছে সমস্ত ব্যাপারটা জেনে বললেন খোকন তার বাসায় থাকবে আর ম্যাডামের জন্য কি করা যায় তা ভাবছেন । শফিক সাহেব সায়েরার সাথে যোগাযোগ করেন । সায়েরা তার পূর্ব-পাকিস্তান বাড়ীতে ফিরে যাবার ব্যবস্থা করার জন্য শফিক সাহেব এর প্রতি অনুনয় বিনয় করতে লাগলেন । শফিক সাহেব দেখলেন পূর্ব-পাকিস্তানে মুক্তি বাহিনীর হাতে মোনেম খানের মৃত্যুর পর থেকেই পশ্চিম পাকিস্থান উত্তাল । এরই মধ্যে আবার মুক্তি সেনা ও ভারতীয় বাহিনীর যৌথ ( মিত্র বাহিনী ) আকাশ পথে আক্রমনে পশ্চিম পাকিস্তানে বাঙ্গালী হিসাবে তার পরিবার নিয়ে বসবাস করা আর নিরাপদ নয় । তাই তিনি তার সবচেয়ে শুভাকাঙ্খী পাকিস্তানী বসের সাহায্য চাইলেন । এক ভোর রাতের অন্ধকারে সায়েরা ম্যাডাম শ্বশুর বাড়ী ছেড়ে শফিক সাহেবদের সাথে মিলিত হন । সেই পাকিস্তানী বসের মাধ্যমে তারা সকলেই করাচী থেকে কলোম্ব হয়ে দিল্লীতে এলেন । সেখান থেকে আবার ট্রেনে করে কলকাতায় শফিক সাহেবের এক আত্মীয়ের বাসায় চলে আসেন । মাসটি ছিল নভেম্বরের শেষের দিকে । সেখানে সায়েরা খান, খোকন আর শফিক সাহেবের পরিবার সকলকে অবস্থান করতে হলো । তখনো পূর্ব-পাকিস্তান জ্বলছে । তুমুল লড়াই চলছে আকাশ পথে মিত্র বাহিনী আর স্থল পথে মুক্তি সেনাদের সাথে পাক হানাদার বাহিনীর । পাক বাহিনী ক্রমেই দুর্বল হয়ে পরতে লাগল । অবশেষে উপায়ান্তর না দেখে ১৪ ডিসেম্বরে বাংলার প্রায় বেশীর ভাগ বুদ্ধিজীবীকে হত্যা করে জাতীকে পঙ্গু বানাবার চেষ্টা করা হয় ।

অতঃপর বাংলার কাঙ্খিত মুক্তি আসে ১৬ই ডিসেম্বর , তদানিন্তন ঢাকার রেস কোর্স ময়দানে বাঙ্গালী জেনারেল ওসমানী এবং ভারতীয় জেনারেল অরোরার নিকট পাকিস্তানী নিয়াজী খানের আত্মসমর্পনের মাধ্যমে ।

.........................................................................................................................................................................
খোকনেরা সকলেই ফিরে আসে স্বাধীন বাংলায় আর মুক্ত বাতাসে দম নিয়ে তারা স্বস্তির দীর্ঘশ্বাস ফেললেন । শফিক সাহেব সায়েরা খান ও খোকন তাদের নিজ নিজ পরিবারের সন্ধান করতে থাকে । যুদ্ধে পরিবারের দু-একজন সদস্য হারালেও শফিক সাহেব সায়েরা খান নিজ নিজ পরিবারের সাথে মিলিত হলেও খোকন তার পরিবারের দু' সদস্যকে আর খুঁজে পায় নি । আজো তার দুচোখ শুধু কিছু প্রশ্নের উত্তর খুঁজে ফিরে বুকপিঞ্জরে একরাশ বেদনা নিয়ে ।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
তানি হক ভিন স্বাদের স্বাধীনতা.. ..দুই বারে শেষ করেছি ..ভীষণ ভালো লেগেছে ভাইয়া .. আপনাকে অভিনন্দন !..দেরিতে আসার জন্য ক্ষমা প্রার্থী !
আনিসুর রহমান মানিক অনেক বড় ,অনেক সুন্দর অনেক ভালো অনেক সময় লাগলো
রোদেলা শিশির (লাইজু মনি ) গল্পটা কি বাস্তব ..... ? নাকি নিছক কল্পনা ... ! কল্পনা নিছক হলে ও কাহিনী নিছক.... বললে পাঠক স্বত্তাকে-ই অবমাননা করা হবে ...! তাই এক কথায় অসাধারণ .........!
রাশিদা অনেক সুন্দর লিখা....ভীষণ সুন্দর কাহিনী .....একটু বাতিক্রমী ....বেশ ভালো লাগলো ! আর শুভকামনা রইলো !
খোরশেদুল আলম যুদ্ধ দেখিনি শুনে শুনে কিছুটা অনুভব করি। কোটি কোটি মানুষের কষ্টের জীবন কাহিনী। লক্ষ লক্ষ মানুষের মৃত্যুর দৃশ্য। এতদিন এ পাশ থেকে অনুভব করেছি। আপনার গল্পে ঐ পাশের করাচির একটি বাড়ির করুণ দৃশ্য আমার চোখে ভাসছে, সায়েরা খোকন এর কষ্টের দিন গুলির বাস্তব চিত্র। অসাধারণ লিখেছেন। ধন্যবাদ খলজী ভাই। শুভ কামনা।
খন্দকার আনিসুর রহমান জ্যোতি Valo legechhe tobe r aktu monojogi hole aro valo hote parto.....Monir Vai dhonnobad.....Mullayon korlam...4
মারুফ মুস্তাফা আযাদ আপনার গল্প যে অসাধারন হবে তাতে কোন সন্দেহ নেই, মনির ভাই। খুব ভালো লাগল।
আহমেদ সাবের গল্পটা পড়া শুরু করেই মনে হচ্ছিল ঘটনাটা সত্য, কারণ লেখাটা গল্পের ফরমেটের সাথে মেলে না। আপনার এবং অন্যদের মন্তব্যে সেটা পরিষ্কার হল। নীরবের "ছেলের মৃত্যুর সংবাদ শুনার পরপরই খোকন কে থানায় নিয়ে যাওয়ার ব্যাপারটি ঠিক লাগেনি আমার কাছে " - মন্তব্যটা স্বাভাবিক সময়ের উপযুক্ত হলেও, মনে রাখতে হবে সময়টা অস্বাভাবিক। গাদ্দারদের(?) একজন প্রতিনিধিদের সেই সময় চোখের সামনে রাখা বড়ই হৃদয় বিদারক। সুতরাং সেই বিচারে আজমত খানের কর্ম বাস্তব অবস্থার সাথে সঙ্গতিপূর্ণ। লেখার সাবলীলতায় মুগ্ধ হলাম বরাবরের মত।
বশির আহমেদ চমৎকার বর্ননায় একটি সুন্দর গল্প । ৭১ এ পাকিস্তানে বাংগালীদের উপর পাকিস্তানীদের অত্যাচারের অজানা কহিনীর নির্মম চিত্র । উদূ ভাষা এমন ব্যবহার করেছেন মনে হলো আপনি যেন উদুভাষী এক জন । আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ ।
পন্ডিত মাহী চোখের সামনে গল্পের ঘটনা গুলো ঘটে যেতে দেখলাম... দারুন গল্প...

২৫ জুলাই - ২০১১ গল্প/কবিতা: ১২ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "স্থিতিশীলতা”
কবিতার বিষয় "স্থিতিশীলতা”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ নভেম্বর,২০২৪